সাদা পর্দা। তার উপর ছায়াপুতুলের নাচ। আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় এর নাম রাবণছায়া, অন্ধ্রপ্রদেশে এর নাম থোলু বোম্মালতা, কর্নাটকে তোগালু গোম্বেয়াটা, কেরালায় তোলপাভাকুথু। ভারতের পূর্ব উপকূল জুড়ে জনসংস্কৃতির উঠোনে গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন নামের ছায়াপুতুলের চারা। কাঠিতে ধরা থাকে চামড়ার তৈরি হরেক রকমের পুতুল– রাম, লক্ষ্মণ, রাবণ, হনুমান। বেশিরভাগ কাহিনিই রামায়ণাশ্রিত, কোনও কোনও জায়গায় যুগের দাবি মেনে কিছু রদবদল হয়েছে কাহিনি নির্বাচনে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এ পুতুলনাচের ইতিকথায় আলোর সঙ্গে অন্ধকারের যে নিরন্তর সংলাপ চলে, তা বিরামহীন, তা চিরকালীন। রাজনৈতিক বয়ান থেকে সংস্কৃতির প্রকরণ, রামায়ণের আঁচলে এই সংলাপের প্রতি পর্বে জড়িয়ে আছে জনজাতির ইতিহাস।
রামায়ণী সংস্কৃতির এই ছায়াজাতকগুলোকে দেখে সেই ছোটবেলার ভাবসম্প্রসারণ মনে পড়ে, ‘আলো বলে, অন্ধকার তুই বড় কালো/ অন্ধকার বলে, ভাই তাই তুমি আলো।’ এসব নাচে আলোর গুরুত্ব যতটা, অন্ধকারের গুরুত্ব তার চেয়ে ঢের বেশি। ওড়িশার প্রকরণশৈলীটির নামকরণ তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। যেহেতু ভগবান রাম পরমব্রহ্ম, তাই তিনি অন্ধকার হতে পারেন না, অতএব এই অন্ধকার বা ছায়া রাবণেরই। যেহেতু ছায়াকে অবলম্বন করেই এই পুতুলনাচের প্রজনন, তাই এই শিল্প মাধ্যমটির নাম রাবণছায়া। রাবণছায়ার বৈশিষ্ট্য হল, এর পুতুলগুলো একটা গোটা চামড়া থেকেই তৈরি হয়– অন্য রাজ্যের পুতুলের মতো চামড়ার টুকরোতে হাত-পা-মাথা আলাদা আলাদা করে বানিয়ে সেগুলো জুড়ে তৈরি হয় না। অন্যান্য রাজ্যের পুতুলে বিভিন্ন রং ব্যবহার করা হলেও, রাবণছায়ায় সেরকম কোনও রং ব্যবহৃত হয় না। এতে পুতুলের শরীর পর্দার ওপর নিকষ কালো ছায়াপাত করে, শরীর ভেদ করে কোনও আলো যাতায়াতের পরিসর থাকে না। মানুষ বা প্রাণীর চরিত্রের পুতুলের সঙ্গে রাবণছায়ায় পটভূমি হিসেবে গাছপালা বা পরিবেশের উপাদানও দৃশ্যের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রাবণছায়া নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক মনোযোগ সহকারে প্রথম উল্লেখযোগ্য গবেষণাটি হয় সাতের দশকে; করেন সংগীত নাটক একাডেমির আধিকারিক জীবন পানি। ওড়িশার ওদাস বলে এক গ্রামে তিনি ‘আবিষ্কার’ করেন পুতুলনাচের ওস্তাদ কাঠিনন্দ দাস-কে, যিনি নাকি এই শিল্পরীতির শেষ জীবিত ওস্তাদ। ১৯৭৮ সালে কাঠিনন্দ সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার পান, ১৯৮৫ সালে রাবণছায়া নাট্য সংসদের সভাপতি হন। কিন্তু শঙ্খজিৎ দে-র তথ্যচিত্র ‘ইন দ্য শ্যাডো অফ টাইম’ এ দাবিকে গুরুতরভাবে নস্যাৎ করে। সেখানে রাভেনশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উড়িয়াভাষার প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান এবং শ্রীরাম ইনস্টিটিউট অফ শ্যাডো থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা গৌরাঙ্গ দাস এক সাক্ষাৎকারে বলেন– সেসময় সিপুর, ভালুকি, কিশোরনগর প্রমুখ গ্রামেও রাবণছায়ার যথেষ্ট চর্চা ছিল, ফলে কাঠিনন্দ দাসকে একমাত্র ওস্তাদ হিসেবে দাবি করা তথ্যগতভাবে ‘ভুল’।
যাঁরা রাবণছায়া পরিবেশন করতেন তাঁরা বংশ পরম্পরায় এই শিল্পরীতির চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। এর সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা ছিলেন মূলত ভট জাতের মানুষ। কয়েক শতাব্দী আগে তাঁরা একস্থান থেকে অন্যস্থানে ক্রমাগত বাসা পরিবর্তন করতেন। ভিখারী না হলেও ভিক্ষা করেই পেট চলত, সঙ্গে ছিল চারণকবিদের সহজাত প্রতিভা। ভিক্ষা চাওয়ার নানা ছলাকলা জানা ছিল তাঁদের। কোনও বাড়ির সামনে গিয়ে সে বাড়ির মালিক কতটা হাড়কিপটে যে এই অসহায় ভিক্ষাপ্রার্থী মানুষগুলোকে সাহায্য করছে না, সেটা পাড়া-পড়শিকে জানিয়ে তাঁরা উঁচুগলায় গান ধরতেন। লোকলজ্জার ভয়ে তড়িঘড়ি বাড়ির মালিক এঁদের ভিক্ষা দিয়ে বিদেয় করতেন। তাঁরা কবে, কীভাবে রাবণছায়া পরিবেশন করতে আরম্ভ করলেন, তার সঠিক কোনও ইতিহাস পাওয়া যায় না বটে, কিন্তু মুখে মুখে প্রচলিত অনেক আকর্ষণীয় গল্প আছে এর উৎপত্তির।
একটা গল্প অনুযায়ী এই ভটদের পূর্বপুরুষরা জনক রাজের সভায় সংগীত পরিবেশন করতেন, এমনকী, রামসীতার বিয়ের সময়ও নাকি সংগীত পরিবেশনের দায়িত্বে তাঁরা ছিলেন। এর উৎপত্তির আরও বেশ কিছু গল্প আছে, যা রামায়ণের যুগের সঙ্গে এই শিল্পের ইতিহাসকে জুড়ে দেখতে চায়। অন্য একটা গল্প অনুযায়ী, এই আঙ্গিকের নাম রাবণছায়া, কারণ নাকি এতে আসলে রাবণের ভূমিকা মুখ্য। পূর্ব জন্মে রাবণের নাম ছিল জয়, যিনি ভগবান বিষ্ণুর দ্বাররক্ষক ছিলেন। কোনও একদিন ভুল কারণে লক্ষ্মী চটে গিয়ে জয়কে অসুর হয়ে জন্মানোর অভিশাপ দেন। সেই ভুল শুধরে রাবণকে মুক্তি দিতেই বিষ্ণুর রামরূপে জন্ম। যেহেতু এখানে রাবণের কাহিনি মুখ্য– তাই রাবণছায়া। আরেকটা কাহিনি দিয়ে রাবণ ছায়ার উৎপত্তির প্রসঙ্গে ইতি টানব। সীতা নাকি একবার কোনও এক সখীর অনুরোধে মাটিতে রাবণের ছবি আঁকেন। সখী জানতে চান সীতা কীভাবে রাবণের দিকে তাকালেন! সীতা জানান, যখন রাবণ সীতাকে পুষ্পকরথে হরণ করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন নীচের জলাশয়ের জলে রাবণের ছায়া দেখেছিলেন তিনি। সেই থেকেই রাবণছায়া। ঐতিহাসিকভাবে মধ্যযুগীয় উড়িয়া মহাকাব্যে ছায়া পুতুল নাচের নিদর্শন পাওয়া যায়, যেমন পঞ্চদশ শতকে সরলা দাসের মহাভারত, ষোড়শ শতকে বলরাম দাসের দণ্ডী রামায়ণ, উপেন্দ্র ভঞ্জ, দীনকৃষ্ণ দাস প্রমুখের কাব্যে। যে আধুনিক রাবণছায়ার সঙ্গে গবেষকরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত, তার পালা অষ্টাদশ শতকের বিশ্বনাথ খুঁটিয়ার বিচিত্র রামায়ণ থেকে নেওয়া।
ভারতীয় পুতুলনাচের ছায়াবাজির এই সুবিশাল চিত্রপটের স্তরে স্তরে রামায়ণী কথা। কিন্তু এসব পুতুলনাচের খুব কম পালাতেই বাল্মীকি রামায়ণ ব্যবহৃত হয়। এ. কে. রামানুজন তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘Three Hundred Ramayanas: Five Examples and Three Thoughts on Translation’-এ উদাহরণ সহকারে দেখিয়েছেন অঞ্চলভেদে কীভাবে রামায়ণ বদলে বদলে যায়; তার সঙ্গে বদলায় চরিত্র, তার উৎপত্তি, এবং সেখানকার জনজাতির যাপনচিত্র। সব রামায়ণ যে লিখিত রামায়ণ, তাও নয়। অনেক সময়তেই এসব পালাতে কথ্য রামায়ণ ব্যবহৃত হয়, যা মূল কাহিনির সঙ্গে বিভিন্ন কবির সংযোজন। কিছু কিছু উদাহরণ অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। যেমন কন্নড় ভাষায় সীতার জন্মবৃত্তান্ত। এ গল্পটি এক অস্পৃশ্য কন্নড় কবির কাছ থেকে সংগ্রহ করে অনুবাদ করেছিলেন রামানুজন।
গল্প শুরু হয় রাবণ আর তার বউ মন্দোদরীকে দিয়ে। এখানে রাবণের নাম ‘রাবুলা’। শুরুতে দেখা যায় তারা সন্তানহীন ও অসুখী। জঙ্গলে গিয়ে তারা মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে তপস্যা করতে থাকে– যতক্ষণ না তাদের শরীর থেকে রক্তপাত হয়। তারপর তাদের এক যোগীর সঙ্গে দেখা হয়। সেই যোগী আসলে শিব। যোগী রাবণকে একটা আম দিয়ে বলে সে আর তার বউ সেটা যেন ভাগ করে খায়। তারপর রাবণকে যোগীরূপী শিব জিজ্ঞেস করে কীভাবে ভাগ করবে? রাবণ বলে, সে বউকে শাঁসটা খেতে দিয়ে সে নিজে আঁটি খাবে। শিব বলে, সাবধান! মনে এক কথা, আর মুখে এক কথা হলে পরে বিপদে পড়বে। এরপর রাবণ ফিরে গিয়ে আমটা বউকে দেওয়ার আগে ভাবে আমি শাঁসটা বউকে দিয়ে দিলে নিজে তো অভুক্ত থাকব! এই ভেবে সে শাঁসটা নিজেই খেয়ে ফেলে। কিন্তু সেটা করেই সে বিপদে পড়ল। পরের দিনেই রাবণ দেখে সে গর্ভধারণ করে বসে আছে। একেকটা দিন পার হয়, পেটের ভিতর বাচ্চা এক-একটা মাস বড় হয়ে যায়। চারণ কবির গানটা খুব মজার, ‘রাবুলার কী হবে গো মা, পেটে যে আর ব্যথা সয় না গো… কী লজ্জা কী লজ্জা, রাবুলার সাত মাস…’ এভাবে গানে গানে বলা হয় যখন নয় মাস পূর্ণ হল, বাচ্চা জন্মানোর সময় এল, তখন একদিন রাবণের বিষম জোরে এক হাঁচিতে বাচ্চা ধরাধামে ভূমিষ্ঠ হল। এই বাচ্চার নামই সীতা। কন্নড় এ সীতা কথার অর্থ ‘সে হেঁচেছিল’। রাবণ জ্যোতিষীদের কাছে গেলে তারা জানাল, সে কথা রাখেনি বলে শিব তাকে শাস্তি দিচ্ছে। অবিলম্বে সে যেন এই কন্যাসন্তান পরিত্যাগ করে। তখন সে রাতের অন্ধকারে একটা মাঠে বাচ্চাকে নামিয়ে রেখে চলে এল। পরদিন ভোরে হাল চাষ করতে গিয়ে জনক রাজা এই সীতাকেই জমি থেকে উদ্ধার করেছিল।
কর্নাটকের তোগালু গোম্বেয়াটা এবং অন্ধ্র প্রদেশের থোলু বোম্মালতা দেখতে একই রকমের। দুটোই চামড়া জুড়ে জুড়ে বানানো এবং প্রায় স্বচ্ছ। পুতুলগুলো বানানোর সময় দু’দিকেই রং লাগানো হয়। উজ্জ্বল সব রং ব্যবহৃত হয় পুতুল নির্মাণে। পিছন থেকে আলো পড়লেও প্রায় স্বচ্ছ হওয়ার কারণে পর্দার উপরে ছায়াতেও রং স্পষ্ট ফুটে ওঠে। এই দুই রাজ্যের পুতুলে প্রধান ফারাক আকারে। কর্নাটকের পুতুল আকারে সাধারণত ছোট হয়। পুতুলের আকার নির্ভর করে তাদের সামাজিক অবস্থান বা প্রতিপত্তি বোঝাতে। অতএব রাজার পুতুল বড় হবে, প্রজার পুতুল ছোট। আবার অন্ধ্র প্রদেশের পুতুলে এরকম কোনও আকৃতিগত শ্রেণিবিন্যাস থাকে না ঠিকই, কিন্তু কর্নাটকের পুতুলের চেয়ে অন্ধ্রের সব পুতুলই বেশ বড়– প্রায় চার সাড়ে চার ফুট থেকে পাঁচ সাড়ে পাঁচ অবধি। অন্ধ্রের পুতুলনাচের পালাগানের উৎস চতুর্দশ শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যে লেখা রঙ্গনাথান রামায়ণ। এসব পুতুলনাচের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন চোল, পল্লব, কদম্ব, চালুক্য, রাষ্ট্রকূট, হয়শালা প্রমুখ দাক্ষিণাত্যের রাজবংশ। মুসলিম শাসকদের অধীনেও এইসব পুতুলের সাজসজ্জায় পরিবর্তন আসে– পোশাক জমকালো হয়। সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের পথ ধরে এই পুতুলনাচ পৌঁছে যায় জাভা, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার মতো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যে রামায়ণ প্রচলিত, তার কিছু কিছু কথনে রাম আর সীতা ভাই-বোন, কিছু কিছু বয়ানে বিমলসূরির লেখা জৈন রামায়ণের প্রভাব আছে। এই রামায়ণের নাম পৌমাচারিয়া তথা পদ্মচরিত। এই সুযোগে খুব সংক্ষেপে জৈন রামায়ণের গল্প অপ্রাসঙ্গিক হবে না। জৈন রামায়ণের গল্প এই কারণেও প্রাসঙ্গিক, কারণ জৈন ধর্ম বেদ-বিরোধী নাস্তিক শাখার ধর্ম। ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে এর জন্ম। নিরামিষাশী এবং প্রাণীহত্যা বিরোধী হওয়ায় জৈন রামায়ণে রাবণকে রাম হত্যা অবধি করেন না। বিমলসূরির রামায়ণ রামের কীর্তি ও মহত্ব বর্ণনা করে আরম্ভ হয় না। সেখানে রাবণ জৈন ঐতিহ্যের তেষট্টি শলাকাপুরুষের একজন, রাম উন্নততর এক আদর্শ, ফলে তিনি নরহত্যা করতেই পারেন না। বৌদ্ধ জাতকের মতো জৈন রামায়ণে বলা হয় যুগে যুগে বাসুদেব আর প্রতি-বাসুদেব জন্মগ্রহণ করেন। রাবণ আসলে প্রতি-বাসুদেব। লক্ষ্মণ যেহেতু বাসুদেব তাই লক্ষ্মণই রাবণকে হত্যা করে নিজে নরকে গমন করেন। রামের জন্মমৃত্যুর চক্র ছেড়ে কৈবল্যপ্রাপ্তি ঘটে।
কেরলের তোলপাভাকুথু রাবণছায়ার মতো অত কালো অন্ধকার নিকষ ছায়ার সৃষ্টি করে না, আবার তোগালু গোম্বেয়াটার বা থোলু বোম্মালতার মতো অত স্বচ্ছ বা উজ্জ্বলও নয়। এখানেও চামড়ার পুতুলে রং করা থাকে। কিন্তু এই ছায়াবাজি মূলত মন্দির প্রাঙ্গণেই পরিবেশন করা হয়ে থাকে। সাদা পর্দার পিছনে শুধু এখানে একটা কাঠের পাটাতনে সারি সারি নারকোলের অর্ধেক খোলা বসানো থাকে, যার মধ্যে দেওয়া নারকোল তেলে সলতে তিরতির করে জ্বলতে থাকে। এই সারি সারি নারকোল প্রদীপই পর্দার পিছনের আলোর জোগান দেয়। এখানে কোনও ইলেকট্রিক বাল্ব বা অন্য কোনও কৃত্রিম আলো ব্যবহৃত হয় না। তোলপাভাকুথু শুরু হওয়ার নেপথ্যের কিংবদন্তিও বেশ মনোগ্রাহী। দেবী ভদ্রকালী নাকি দারিকা নামের দৈত্যকে বধ করতে ব্যস্ত ছিলেন বলে রাবণবধ করার সময় নিধনপর্বটি দেখতে পারেননি। তাই প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবীকে সেই রাবণবধের কাহিনি দেখানো হয়। জনমানসে ধারণা, দেবী এইসময় খুব প্রসন্ন থাকেন।
…………………………………………………..
আরও পড়ুন পৃথু হালদার-এর লেখা: কাইরোজ: দুই প্রজন্মের অসমবয়সি মানুষের প্রণয়ের অস্তরাগ
…………………………………………………..
বিশদে গেলে এ আলোচনা আরও আরও লম্বা হবে। মোদ্দা কথা, এইসব ছায়াবাজি বাল্মীকি রামায়ণে নেই– এমন সব গল্পে কান পাতলেই শোনা যাবে, আমরা সত্যি বলে যা জানি বা বুঝি তার উল্টোটাও আসলে ঠিক। বড় গল্পের নিচে সব সময়তেই ছোট গল্পের চোরাস্রোত লুকিয়ে থাকে। ভারতের জাতীয় জীবন তো আসলে রামায়ণেই শুরু, রামায়ণেই শেষ। সেযুগের বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন, এ যুগের ওমপ্রকাশ বাল্মীকি দলিত আত্মজীবনী রচনা করেন, ‘জুঠান’; মহাত্মা গান্ধী মৃত্যুর আগে উচ্চারণ করেন, হে রাম! আর তাঁকে হত্যা করেন সেই নাথু-রাম। যে শিল্পে রামায়ণের গল্প ফুটে ওঠে, তার মাধ্যম হয় মরা পশুর চামড়া। সেই চামড়ার হাত পা সেলাই করতে ডাক পড়ে যেসব নীচু জাতের মানুষের– মহাকাব্যে তাঁদের ঠাঁই হয় না, তাই তাঁরা নিজেরাই নিজেদের গল্প বানিয়ে নেন। আলো ভালো, না অন্ধকার– এ প্রশ্নের গোঁড়া উত্তর সহজ হতেই পারে, কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, আসল উত্তরটা অত সোজা নয়। পর্দায় যেখানে আলোর জীবনে হাজার চরিত্রের ভিড়, সেখানে অন্ধকারকে একটা ছায়াও সঙ্গ দেয় না। সেজন্যেই বোধহয় রামায়ণে রাবণছায়া বেশি মরমী।
………………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
………………………………………..
The post রামায়ণের আঁচলে আলোর সঙ্গে চলে অন্ধকারের নিরন্তর সংলাপ appeared first on Robbar | Sangbad Pratidin.