Quantcast
Channel: পাঁচমিশালি Archives - Robbar | Sangbad Pratidin
Viewing all articles
Browse latest Browse all 110

১০ মিনিট শেষমেশ পাংচুয়াল হল

$
0
0

দশ মিনিটে কী হয়?

টিভিতে কমার্শিয়াল ব্রেক আর জুত করে গোটা চার আড়মোড়া-সহ হাই তোলা ছাড়া, আর যে কাজটি দশ মিনিটে হয়, তা হল নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর হোম-ডেলিভারি। নিওমার্কেনটাইল ভাষায় যাকে বলা হয়, ‘কুইক কমার্স’। চালডালের মত হেঁশেল এসেনসিয়াল থেকে খোকাখুকির ইশকুল মেটেরিয়াল, ভোরের পুজোর ফুল-বেলপাতা থেকে সান্ধ্য আড্ডার পান-সিগারেট; ইস্ত্রি থেকে ইলেক্ট্রিক-ফ্যান, পানপাতা থেকে কমপ্ল্যান, গঙ্গাজল থেকে বাথরুম কল, কন্ট্রাসেপ্টিভ থেকে ধোয়াকাটা ফল– সবই যত্ন করে ঘরের দোরে ১০ মিনিটে পৌঁছে দিয়ে যায় ‘ব্লিঙ্কিট’, ‘জেপ্টো’, ‘সুইগি’ ‘ইনস্টামার্ট’ কিংবা ‘বি.বি. নাও’-এর মতো ‘কুইক কমার্স’ সংস্থার ডেলিভারি কর্মীরা।

রকমারি আইটেমের বিপুল ভাণ্ডার থেকে প্রত্যেক ক্রেতার আলাদা আলাদা অর্ডার লিস্ট অনুযায়ী জিনিস বাছাই করে, ওজন করে, প্যাকেটে ভরে, নির্দিষ্ট ডেলিভারি কর্মীর ব্যাগে করে নির্দিষ্ট ঠিকানায় দশ মিনিটে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়ায় তো দূর, আইডিয়াতেই দুঃসাহসী। এখন যদিও নিত্যদিনের সাংসারিক প্রয়োজন মেটাতে মেটাতে, এই দামাল আইডিয়াটিও নৈমিকতার নিয়মে তার ম্যাজিক হারিয়েছে বিবাহিত প্রেমের মতোই। কিন্তু এই তো মাত্র বছর আড়াই আগে, ২০২১ সালে কলম্বিয়া বিজনেস স্কুলের ছাত্র আলবিন্দার ধিন্দসা যখন তাঁর ‘গ্রোফার’ কোম্পানির নাম বদলে দিলেন ‘ব্লিঙ্কিট’, আর দশ মিনিটে মুশকিল আসানের বিজ্ঞাপন দিলেন সংবাদপত্রের ফ্রন্ট পেজ জুড়ে, তখন আমার মতো স্বভাবসন্দেহীরা, ব্যাপারটাকে স্রেফ পরীক্ষা করার জন্যই অর্ডার করল অনলাইন। ডেলিভারি এল বিফোর টাইম– আট মিনিটে! সেদিনের সেই অর্ডার প্রয়োজনভিত্তিক ছিল না। আর আজকের দিনে প্রয়োজনের আরেক নামই ‘কুইক কমার্স’। সত্যি বলতে কী, এ-বিশ্ব সংসারের কী বা কে, কবে, কখন কীভাবে যে অপরিহার্য হয়ে ওঠে, বোঝা মুশকিল।

শুরুর মাত্র আড়াই বছরের মধ্যেই অর্থাৎ ২০২৪ সালের হিসেবে, ভারতের ‘কুইক কমার্স’ বাজারের অবিসংবাদিত রাজা ৫৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কোম্পানি ব্লিঙ্কিট। এদেশের দ্রুত পণ্যসরাবরাহ বাজারের ৪৫ শতাংশের অধিকারী। এরপর রয়েছে সুইগি ইন্সটামার্ট, জেপ্টো এবং বিগ বাস্কেট নাও। যথাক্রমে ২৭ শতাংশ, ২১ শতাংশ এবং ৭ শতাংশ বাজার নিয়ে। তবে দশ মিনিটে ঘরে পৌঁছে দিলেও, এ ধরনের কোম্পানির ‘অর্ডার প্লেস’ থেকে ‘অর্ডার ডেলিভারি’-র সম্পূর্ণ কর্মপদ্ধতিটি কিন্তু বেশ দীর্ঘ ও জটিল। উদাহরণ দিয়ে বলি, ব্লিঙ্কিট কোম্পানিটি  চলে কমিশন নির্ভর রেভিনিউ মডেলে। অ্যাপের মাধ্যমে ক্রেতা অর্ডার প্লেস করার সঙ্গে সঙ্গে তা কম্পিউটারে রেকর্ড হয়। তারপর ডেলিভারি কর্মীরা ক্রেতার ঠিকানার দুই কিলোমিটারের মধ্যেকার ডিস্ট্রিবিউটার বা কোম্পানির নিজস্ব গুদামঘর থেকে ফর্দ মিলিয়ে আইটেম সংগ্রহ করে তা প্যাকেটজাত করেন। সংগৃহীত পণ্যে ডিস্ট্রিবিউটারের লভ্যাংশের ৮ থেকে ১৫ শতাংশ পায় কোম্পানি। এভাবেই চলে ব্যবসা।

ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

ছোটবেলায় পড়া সিন্ডারেলা গল্পের পরি-মা যেমন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় মুহূর্তের মধ্যে সিন্ডারেলার ঘরের সব কাজ করে দিতেন, তেমনই ব্লিঙ্কিটের গড়পড়তা ১৮টি পণ্যের একেকটি অর্ডারের প্রতিটি প্যাকেটজাত হয়ে যায় মাত্র ৩ মিনিটে! দেশের ২৮টি রাজ্যে কোম্পানিটি প্রতিদিন গড়পড়তা যে ১৩ হাজার অর্ডার ডেলিভার করে, তার প্রতিটিই প্যাকেটগত হয় এই ৩ মিনিটের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে। এখানে আরও মনে রাখতে হবে যে, এই পণ্যের গড়পড়তা ২২ শতাংশ ভঙ্গুর প্রকৃতির এবং ৬ শতাংশ তাপমাত্রা নির্ভরশীল পচনশীল দ্রব্য।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

আর ব্লিঙ্কিট কোম্পানির অর্ডার প্যাকেজিং পদ্ধতিটি যেন আস্ত এক রূপকথা। ছোটবেলায় পড়া সিন্ডারেলা গল্পের পরি-মা যেমন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় মুহূর্তের মধ্যে সিন্ডারেলার ঘরের সব কাজ করে দিতেন, তেমনই ব্লিঙ্কিটের গড়পড়তা ১৮টি পণ্যের একেকটি অর্ডারের প্রতিটি প্যাকেটজাত হয়ে যায় মাত্র ৩ মিনিটে! দেশের ২৮টি রাজ্যে কোম্পানিটি প্রতিদিন গড়পড়তা যে ১৩ হাজার অর্ডার ডেলিভার করে, তার প্রতিটিই প্যাকেটগত হয় এই ৩ মিনিটের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে। এখানে আরও মনে রাখতে হবে যে, এই পণ্যের গড়পড়তা ২২ শতাংশ ভঙ্গুর প্রকৃতির এবং ৬ শতাংশ তাপমাত্রা নির্ভরশীল পচনশীল দ্রব্য। ফলে তাদের জন্যে আবার ভিন্ন প্যাকেজিং ব্যবস্থা করতে হয় ওই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই! কারণ তা না করা গেলে দশ মিনিটে ডেলিভারির প্রতিশ্রুতি রক্ষা হবে না।

ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

দশ মিনিটের এই দৌড় আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নিঃসন্দেহে সহজ করেছে। কিন্তু আজকের দিনে ১০ মিনিটে আমরা যা যা চাইছি, বুকের মাঝে দিব্য জানি যে, তার অধিকাংশই আদপে আমার প্রয়োজন নেই। ১০ মিনিটে তো নয়ই। অথচ এই অপ্রয়োজনে ওপরে ভিত্তি করেই সাম্রাজ্য বিস্তার করছে আজকের দিনের অন্যতম বুমিং সেক্টর ‘কুইক কমার্স’; আলবিন্দার ধিন্দসারা যাকে বলছেন, ‘ভবিষ্যতের প্রধান ব্যবসা’।

তবে এই ব্যবসার সঙ্গে ভারতীয় বা বিস্তীর্ণ অর্থে এশীয়-প্যাসিফিক দেশগুলির সম্পর্ক যতটা ওতপ্রোত, বাকি বিশ্বের ততটা নয়। কোহেরেন্ট মার্কেট ইনসাইটস এর প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, এশিয়া প্যাসিফিক, ইউরোপ, আফ্রিকা সহ মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকা এবং লাতিন আমেরিকা– বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশেই কিন্তু ‘কুইক কমার্স’ পরিষেবা উপস্থিত। কিন্তু ভারত-সহ গোটা এশীয়-প্যাসিফিকে জনপ্রিয়তা তুলনাহীন। তাই ১০ মিনিটে পণ্য পরিষেবার যে বিশ্ববাজার, তার ৫০ শতাংশই এশীয়-প্যাসিফিকের দখলে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ। যথাক্রমে ২৫ ও ১৫ শতাংশ বাজার শেয়ার নিয়ে।

এর মানে দাঁড়াল এই যে, বছর দশেক আগেও যে ‘দশ মিনিট’ আমাদের কাছে ছিল কেবল এক কথার কথা; অফিস যেতে দেরি হলে বসকে, লেখা পাঠাতে দেরি হলে সম্পাদককে, থিয়েটারে ঢুকতে দেরি হলে প্রেমিককে, এমনকী ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে অ্যালার্ম ক্লককেও ‘ব্যাস আর ১০ মিনিট’ বলে যে নির্ভেজাল ঢপবাজির কমিটমেন্ট ক’দিন আগে অবধিও করা যেত অনায়াসে, সে যুগের অবসান তবে হয়েই গেল। বাঙালির শতাব্দী-প্রাচীন শব্দবন্ধ ‘১০ মিনিট’– নিখাদ বাঙালি না হলে যার অর্থ ও ভাব, কোনওটিই ধরতে পারা যায় না, একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে সে-ও তবে সাহেবি হল, সাবালক হল। কাঁটায় কাঁটায় ঘড়ি মিলিয়ে দশ মিনিটের ডেলিভারি ১১ কি ১২ ছুঁলেই কোম্পানির গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে বাঙালি যেদিন থেকে ফোন করে নালিশ ঠুকতে লাগল, গলদঘর্ম ডেলিভারি এজেন্টকে একগ্লাস জলের বদলে বাক্যবাণ অফার করতে থাকল, ‘এই জন্য কি আপনাদের ১৫ টাকা এক্সট্রা কনভিনিয়েন্স ফি দিই না কি?’, সেইদিন, ঠিক সেইদিন থেকে বাঙালি জাতির বাঙালিয়ানা গেল ঘুচে! তার এমন ওয়েস্টারনাইজেশন ঘটল, যে কালাপানি পেরিয়ে তা আর প্রাচ্যে ফিরবে বলে মনে হয় না!

তা ওয়েস্টার্ন প্রযোজক নিকোলাস ম্যাকক্লিন্টক বুঝি দিব্যদ্রষ্টা ছিলেন! তিনি বোধহয় আঁচ করতে পেরেছিলেন যে, একুশ শতকের মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় চালডালই শুধু নয়; বিপ্লব, প্রেম, পরাজয়, মায়া, প্রপঞ্চতা, জন্ম, এমনকী, পুনর্জন্মের অনুভূতির বোঝাপড়াও হয়ে যাবে ১০ মিনিটে। তাই ২০ থেকে ২১ শতাব্দীতে উত্তরণের সময়ের প্রতিফলন এঁকেছিলেন, ‘টেন মিনিটস ওল্ডার’ নামক সিনেমায়। ১৫ জন বাছাই করা নির্দেশকের নির্দেশনায় বানানো ১৫টি ছবির সংকলন, ধরা আছে দু’টি খণ্ডে। প্রথম খণ্ড ‘দ্য ট্রাম্পেট’ আর দ্বিতীয় খণ্ড ‘দ্য চেলো’। এতে তিনি দেখিয়েছিলেন যে, আস্ত একটা জীবনে যা যা চাওয়া যায়, যতটা বেপরোয়া অ্যাডভেঞ্চার করা যায়, রাজনীতির নামে যে পরিমাণ জোচ্চুরি করা যায়, যতবার মরতে মরতে বেঁচে যাওয়া যায়, সভ্যতার আলোর কাছাকাছি গিয়েও তা না ছুঁয়ে ফিরে যাওয়া যায়, কিংবা যুদ্ধফেরত সর্বহারা হয়েও নিমেষে আবার সংসারের মায়াবন্ধনে আটকে পড়া যায়, সবই আসলে ১০ মিনিটের খেলা। জীবনে যার অনুপ্রবেশ ঘটে ট্রাম্পেটের গম্ভীরতায়। আর তারপর চেলোর মতো সহজ অনুরণনে কমপ্লিকেটেড হয়ে ঘুরতে থাকে মস্তিষ্ক জুড়ে।

জীবন আসলে আর কিছু নয়, ১০ মিনিটের খেলাগুলোকে ধরতে পারারই দপ্তরি নাম।

The post ১০ মিনিট শেষমেশ পাংচুয়াল হল appeared first on Robbar | Sangbad Pratidin.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 110

Trending Articles