এলোমেলো কবিতা পড়ার মধ্যে একরকম আনন্দ। সাল-তারিখের কাঁটাতার পেরিয়ে, সামঞ্জস্য-সূত্রহীন– কেবল পড়ার জন্য পড়া। তেমন আনন্দ অবিন্যস্ত ছবি দেখায়। পরিকল্পনার আঁটসাঁট বন্ধন নেই; তত্ত্বের যান্ত্রিক আভিজাত্যকে অতিক্রম করে শুধু দেখা। ছবির ম্লান জলে দু’চোখ ভিজিয়ে নেওয়া।
Clik here to view.

চারুকলা পর্ষদের সাম্প্রতিক প্রদর্শনীখানা তেমন। শিশুর খেলনাবাটির মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ছবি। ছড়িয়ে রয়েছে অবনীন্দ্রনাথ থেকে যামিনী রায়, ইন্দ্র দুগার থেকে চিত্তপ্রসাদ। ইচ্ছে হলেই হাতে তুলে নিয়ে দেখা যায়। দুয়ার পেরোলেই চেনা ছবি। প্রদর্শনীকক্ষের সাদা দেওয়াল থেকে ছলছল চোখে আশ্বাস দিচ্ছেন যামিনী রায়ের যিশু। হরেন দাসের একখানা পরিচিত উডকাট; রমেন চক্রবর্তীর গান্ধী। কিংবা গোবর্ধন আশের ‘মন্বন্তর’ সিরিজ থেকে একখানা ছবি। গোধূলি আলোর দ্রুত ব্রাশ-স্ট্রোকে ধরা তেতাল্লিশের অভিশাপ। কিশোরী রায়ের গারোয়াল মেয়ের পোর্ট্রেট ললিতমোহনের লখনউতে করা একখানা তেলরঙের কাজকে মনে করায়। গারোয়াল পর্বে করা ললিতমোহনের একখানা উডকাট।
Clik here to view.

ডানদিকের দেওয়াল জুড়ে ছড়িয়ে বাংলার গ্রামিক কর্মজীবন। হরেন দাসের এচিং থেকে চিত্তপ্রসাদের উডকাট হয়ে ইন্দু রক্ষিতের ওয়াশ অবধি যেন একই দৃশ্যের প্রলম্বিত জন্ম। বাঁদিকের দেওয়াল খণ্ডদৃশ্যের কোলাজ। একটি থেকে অন্যটিতে উড়ে যাওয়া যায়। ইন্দ্র দুগার থেকে বীরেন দে হয়ে গোপাল ঘোষ। ল্যান্ডস্কেপ। যেন বিষ্ণু দে পড়তে পড়তে দু’-এক ছত্র আলোক সরকার। বিকাশ ভট্টাচার্যের একখানা অদেখা পোর্ট্রেট। নাম নেই, সাল নেই, নেই ছবি-সংক্রান্ত কোনো তথ্য। থাকার প্রয়োজনও নেই তেমন। অপরিকল্পনারও যে এমন নান্দনিক আবেদন থাকতে পারে! কেবল অনুসন্ধানীর চশমাটুকু খুলে রাখলেই সে আলো চোখে পড়ে।
Clik here to view.

অচেনা ছবির মধ্যে হাসিরাশি দেবীর ছবিখানা এই প্রদর্শনীর পাওনা। উপরি পাওনা রাধা বাগচির একখানা অসামান্য উডকাট। যামিনী রায়ের শিব-পার্বতীর মুখোমুখি নন্দলালের হরগৌরী। প্রায়-অদর্শন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের কালো মোটা ব্রাশের ‘উজ্জয়িনী’ আর জয়নুল আবেদিনের ড্রাই ব্রাশের পোর্ট্রেট। বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ভবেশ সান্যালের প্রিন্টের বাঘের সামনে। ভালোবাসার বাঘ, তার শরীর জুড়ে বনচ্ছায়া, খসে পড়ছে ডোরাচিহ্ন। শক্তির পদ্য মনে পড়ে। চিত্তপ্রসাদের প্রথম দিককার ছবিগুলির সঙ্গে সাধারণ ছবি-দেখিয়ের পরিচয় প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষত প্যাস্টেলে করা ল্যান্ডস্কেপ অথবা ফোলিয়েজগুলো। উডকাটের পাশাপাশি, চিত্তপ্রসাদের তেমন একটি ছবি।
Clik here to view.

চেনা ছবি, অচেনা ছবি। বেঙ্গল স্কুল থেকে কলাভবন হয়ে আধুনিকতার দিকে। একখানা চলমান ক্যানভাসের মতো। ছবি চলেছে। চলেছে তার নিজের পথে। বেখেয়াল। অগোছালো। ছবিকারের স্টুডিও-র মতো। অনভ্যস্ত চোখ সে-পথে খুঁজে নেবে বিস্ময়। আর অভ্যস্ত চোখ, সুষম বিন্যাসের বাঁধা পথ ছেড়ে খুঁজে নেবে আনন্দ। কেননা আনন্দই যে, শেষ অবধি, ছবিকার আর ছবি-দেখিয়ের দু’টি স্বতন্ত্র যাত্রার অভিন্ন শেষ স্টপেজ।
১৭ মার্চ শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী, গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়। চলবে ২৪ মার্চ পর্যন্ত। দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা। শিল্পরসিকরা একবার ঢুঁ মারতেই পারেন। হতাশ হবেন না নিশ্চিত।
……………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………
The post পর্ষদের প্রদর্শনী: বেহিসেবি ছবি দেখার আনন্দ appeared first on Robbar | Sangbad Pratidin.