ভারত সচিবের দপ্তরে নিতান্তই একজন আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত হলেও ১৮৯৯ সালে গভর্নর জেনারেল হিসেবেই কলকাতায় অর্থাৎ ভারতে এলেন লর্ড কার্জন। কলকাতায় এই মূর্তির বেশ কয়েকবার স্থান বদল হয়েছে। একেবারে প্রথমে এই মূর্তি ছিল উটরাম রোডের মাঝখানে। পরে ১৯৬৯ সালে কার্জনের মূর্তিটিই প্রথম অপসারিত ইংরেজ রাজপুরুষের মূর্তি।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
বেশ একটা সেনানায়ক সেনানায়ক একরোখা ভাব কার্জনের। এমনভাবেই মূর্তির নির্মাণ। ইংরেজ শাসকের এই মূর্তি রোমান মাইথোলজির দেবমূর্তির আদলে নির্মিত হল না। বদলে এখানে কার্জন সরাসরি একজন জেদি একরোখা সেনাপতির মতো। আসলে এই মূর্তি নির্মাণের জন্য কার্জনের ছিল নিজস্ব মতামত। তাঁর মতামত নিয়েই মূর্তিটি ব্রোঞ্জ মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তিনিই চেয়েছিলেন যে, এই মূর্তি হবে গভর্নর জেনারেলের দরবারি পোশাক পরিহিত সঙ্গে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্য অর্ডার অব দ্য় স্টার অব ইন্ডিয়া’ রোব। এবং এই মূর্তির বেদির চারপাশে বসবে চারটি অঙ্গমূর্তি। এই চারটি অঙ্গমূর্তিই আসলে গভর্নর জেনারেল এবং ইংরেজের ভাবমূর্তিকে সকলের সামনে উজ্জ্বল করবে।
Clik here to view.

কী এই চার অঙ্গমূর্তি? এই চারটি অঙ্গমূর্তি হল শান্তি (পিস), কৃষি (এগ্রিকালচার), বাণিজ্য (কমার্স) এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল দুর্ভিক্ষ ত্রাণ বা (ফেমিন রিলিফ)। আসলে কার্জন চেয়েছিলেন এদেশে নিজের সিদ্ধান্তমূলক কাজগুলিকে মূর্তির মাধ্যমে স্থায়ী ও মহিমান্বিত করে রাখতে। যেমন তিনিই এদেশে কৃষি কাজের উন্নতির জন্যে সেচব্যবস্থা করেন আবার তিনিই বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে দুর্ভিক্ষ কবলের হাত থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সঙ্গে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ আইনও তারই করা। তাছাড়া কার্জনই তো কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি দপ্তর তৈরি করেন এদেশে। সেই কারণেই অঙ্গমূর্তির মধ্যে দিয়ে নিজের কাজকে মহিমান্বিত করার কথা ও নিজের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করার কথা ভেবেছিলেন স্বয়ং কার্জন নিজেই। সেই অনুসারেই কার্জনের মূর্তির চারপাশে অঙ্গমূর্তি বসে। আজ সেই অঙ্গমূর্তিগুলি রয়ে গিয়েছে পথের মাঝে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সদর দরজার সামনে।
Clik here to view.

মূর্তি গড়েন হ্যামো থরনিক্রফট্। মজার কথা, ১৯০৫ সালে কার্জনের এই মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সেই বছরেই কিন্তু কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আসলে মানুষের মন থেকে বঙ্গভঙ্গের অপকর্মের ছায়া মুছে দিতেই নিজের বাকি কাজগুলিকেই আলোকিত করে দেখানোর ভাবনা নিয়েছিলেন কার্জন। এই উপায়েই নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার কথা অক্ষরে অক্ষরে মনে রাখত ইংরেজ। যেমন অঙ্গমূর্তি দুর্ভিক্ষ ত্রাণ আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছিল এদেশের ভূমিতে বহুবার ইংরেজ নিজেই ম্যান মেড ফেমিনের জনক হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমানে অঙ্গমূর্তি রাস্তায় আর কার্জন লাটবাগানে।
তথ্যসূত্র: কলকাতার স্ট্যাচু, কমল সরকার
ছবি: লর্ড কার্জন (লাটবাগান) পার্থ দাশগুপ্ত
অঙ্গমূর্তি (ফেমিন রিলিফ এবং কমার্স): আলোক নূর ইভানা
…পড়ুন ভাবমূর্তি…
পর্ব ১। শাসককে দেবতা বানানোর অভিপ্রায়েই কলকাতায় পথে-প্রান্তরে ইংরেজরা বসিয়েছিল মূর্তি
পর্ব ২। হেস্টিংসের মূর্তি আসলে অত্যাচারীরই নতুন ভাবমূর্তি
The post বঙ্গভঙ্গের ছায়া মুছতে অঙ্গমূর্তির পরিকল্পনা করেছিলেন লর্ড কার্জন appeared first on Robbar | Sangbad Pratidin.