Quantcast
Channel: পাঁচমিশালি Archives - Robbar | Sangbad Pratidin
Viewing all articles
Browse latest Browse all 112

মানুষের যৌনতার বোধ দিয়েই তৈরি হয়েছে অমর্তলোকের যৌনতা

$
0
0

অজাচার, ব্যভিচার ও কাম– এই তিন বৈশিষ্ট্য চিরকাল মনুষ্যজাতির সঙ্গী। আদি থেকে অন্তে। জন্ম থেকে মরণে। সেজন্য, মানুষেরই চির কল্পনায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা দেবতারাও এসব বৈশিষ্ট্য হতে মুক্ত নন। তাঁদের মধ্যেও কাম যে কতটা প্রবল, বাসনা যে কতটা তীব্র, সেসব নিয়ে এই লেখা। হ্যাঁ, কেউ কেউ হয়তো এই লেখা পড়ে আমায় দাগিয়ে দেবেন ‘সেকুলার’ বলে, কিন্তু খানিক বইপত্র ঘাঁটলে এসব আপনারাও দেখবেন। তবে, আমি মনে করি এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে আমরা পেয়েছি। সেজন্য হয়তো বলা হয়– আমরা এখনও বর্বর। তবে, ঈশ্বরদের ‘সেল্ফ কন্ট্রোল’ কিন্তু আমাদের থেকে বহু অংশে সামান্য। হয়তো, আমরাই চেয়েছিলাম তাঁদের ও-ভাবে গড়ে তুলতে। ভিন্ন চরিত্রের সাদাকালো দিকগুলো রূপদানের সময় যথেচ্ছাচারের মাধ্যমে আমরা বোঝাতে চেয়েছি ঈশ্বরের একাধিপত্য ও ক্ষমতার ভাবধারা সম্পর্কে। এও মনে রাখতে হবে, মনুষ্যসমাজে ব্রহ্মচর্য পালন কোনও দিন সাধারণ বিধি ছিল না। সেজন্য, দেবসমাজও এর ব্যতিক্রম নয়।

Why do Hindu temples keep vivid sexual figures and statues? - Quora

ঋগ্বেদ থেকে জানা যায়, যমী তার যমজ ভাই, যমের নিকট সঙ্গম প্রার্থনা করছেন; দস্ত নিজ বোন মায়ার প্রতি, লোভ নিজ বোন নিবৃত্তির প্রতি, ক্রোধ নিজ বোন হিংসার প্রতি ও কলি নিজ বোন নিরুক্তিকে বিবাহ করছেন। আবার উষা সূর্যের মাতা কিন্তু, সূর্য প্রণয়ীর ন্যায় তাঁর প্রতি প্রেম নিবেদন করছেন ও তাঁকে স্ত্রীরূপে বরণ করছে। মৎস্যপুরাণে লক্ষ করা যায়, শতরূপ ব্ৰহ্মার কন্যা। কিন্তু ব্ৰহ্মা কন্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে অজাচারে লিপ্ত হন। আদিত্যযজ্ঞ চলাকালীন বরুণ ও মিত্র উর্বশীকে দেখে কামনা লালসায় অভিভূত হয়ে যজ্ঞকুম্ভের মধ্যে শুক্রপাত করেন। সেরকম অগ্নি একবার সপ্তর্ষিদের স্ত্রীদের দেখে কামোন্মত্ত হয়ে পড়েছিলেন। ঋক্ষরজাকে দেখে ইন্দ্র ও সূর্য– উভয়েই এমন উত্তেজিত হয়েছিলেন যে, রামায়ণ মতে সূর্যের বীর্য তাঁর গ্রীবায় ও ইন্দ্রের বীর্য তাঁর কেশের ওপর পড়েছিল।

'Your Approach Is That Of A Woman Hungry Of Sex'

তো, এইসব থেকে এ-কথা বোঝা যাচ্ছে যে, যৌনজীবনে দেবতাদের কোনও রূপ সংযম ছিল না। ঈশ্বরদের যাপনে ধর্ষণের উদাহরণও মেলে আদি গ্রন্থে। যেমন, দক্ষের ২৭টি মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন চন্দ্র। কিন্তু তাতেও তাঁর কাম-লালসার পরিতৃপ্তি ঘটেনি। সেজন্য উত্তেজনাবশত তিনি দেবগুরু বৃহঃস্পতির স্ত্রী তারাকে অপহরণ ও ধর্ষণও করেছিলেন। এদিকে, দেবগুরু বৃহঃস্পতিও তাঁর ভ্রাতার স্ত্রী মমতা অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে বলপূর্বক সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিলেন।

সূর্যের স্ত্রী উষার সঙ্গম লাভের আশায় অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্র ও অশ্বিনীদ্বয় দেবগণের মধ্যে ভীষণ এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। ঋগ্বেদ মতে, সোমরস পান করে ইন্দ্রের উদর স্ফীত হয়েছে। হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ-এর বর্ণিত, মহাভারতে উল্লেখ্য একদিন গৌতম মুনির অনুপস্থিতিতে ইন্দ্র গৌতমের রূপ ধারণ করে তাঁর স্ত্রী অহল্যার সতীত্ব নাশ করেছিলেন।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

ঋগ্বেদ থেকে জানা যায়, যমী তার যমজ ভাই, যমের নিকট সঙ্গম প্রার্থনা করছেন; দস্ত নিজ বোন মায়ার প্রতি, লোভ নিজ বোন নিবৃত্তির প্রতি, ক্রোধ নিজ বোন হিংসার প্রতি ও কলি নিজ বোন নিরুক্তিকে বিবাহ করছেন। আবার উষা সূর্যের মাতা কিন্তু, সূর্য প্রণয়ীর ন্যায় তাঁর প্রতি প্রেম নিবেদন করছেন ও তাঁকে স্ত্রীরূপে বরণ করছে।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

এইভাবে ইন্দ্র, মর্ত্যলোকে এসেও নারীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। এতে বালী ও অর্জুনের জন্ম হয়েছিল। ধর্মের ঔরসে কুন্তীর গর্ভে যুধিষ্ঠিরের জন্ম হয়। অনুরূপভাবে, অগ্নির ঔরসে মাহিষ্মতী নগরীর ইক্ষাকুবংশীয় রাজকন্যা সুদর্শনা অন্তঃসত্ত্বা হন। পবনদেবও কেশরীরাজের স্ত্রী অঞ্জনার গর্ভে সন্তান আনেন, সে-পুত্র হলেন হনুমান।

এক্ষেত্রে দেব-স্ত্রীরাও কামনার যাতনায় মোটে পিছিয়ে ছিলেন না। এক বিরাট যজ্ঞের সময় স্বাহা লক্ষ করেন, দেব-ইন্দ্র সপ্তর্ষিদের স্ত্রীদের দেখে ক্রমশ কামাতুর হয়ে পড়ছেন। সেজন্য, তিনি ছলনার বশে ছ- ছ’বার চেহারার ভেট ধরে ইন্দ্রের সঙ্গে মিলিত হন। এবং, ছয়বারই অগ্নির বীর্য কাঞ্চনকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

আরও পড়ুন: গোয়েন্দা মানেই ভদ্রলোক, বাংলা গোয়েন্দা-সাহিত্যের এই জোরালো বয়ান বদলে দেন আশাপূর্ণা দেবী

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

এ-লোকে আমরা যেমন কৌতূহলে অপেক্ষারত থাকি অন্যের সঙ্গম মুহূর্ত দেখার, দেবলোকেও তেমন দৃষ্টান্ত মেলে। কালিদাসের ‘কুমারসম্ভব’-এ আমরা দেখতে পাই, উমার সঙ্গে মহাদেবের রমণকালে পর্বতাকারে অগ্নিদেব সেই রমণক্রিয়া দেখেছিলেন।

Pin on shiva

শতপথব্রাহ্মণে উল্লেখ্য যে, রাজা পুরুরবা একবার দেবসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। এবং সেখানে নৃত্যকালে পুরুরবার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকালে উর্বশীর তালভঙ্গ হয়। ফলে ইন্দ্রের শাপে উৰ্বশীকে মর্ত্যে এসে বাস করতে হয়। মর্ত্যে এসে পুরুরবা ও উর্বশী পরস্পর প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়েন।

তবে, চরিত্রের দিক থেকে স্বর্গের একমাত্র ব্যতিক্রম দেবাদিদেব। সেজন্য হয়তো শিবের মাথায় জল ঢেলে, মর্তের নারীরা কামনা করেন তাঁর মতো স্বামী লাভের। যিনি শঙ্কর, নিঃষ্কলঙ্ক।

আমার এ-লেখাটি দেবলোকের কেচ্ছা শোনানোর জন্য লিখিনি। লিখেছি সাদৃশ্য বোঝাতে, এগুলোর উৎপত্তিগত ভাবনা বোঝাতে। আসলে, আমার মতে মর্ত্যের রাজসভায় বিলাসমণ্ডিত ও লাস্যময় প্রতিবিম্বই আমরা ইন্দ্রের বর্ণিত সভায় দেখতে পাই। মর্তে যেমন কামের বশে পুরুষ ও নারীর পদস্খলন ঘটে, দেবলোকেও তেমনই। এখানে যেমন ধর্ষণ, অপহরণ চলে, ওখানেও তেমন।

আসলে, মনুষ্য-সমাজ দেবতাদের প্রতিষ্ঠা করেছে, নিজের প্রতিচ্ছবি অনুযায়ী। যেখানে অজাচার, ব্যভিচার ও কাম– এই তিন একে অপরের হাত ধরাধরি করে এঁটে থাকে। চিরটাকাল থাকবে। সেজন্য বোধহয় মনুষ্যসৃষ্ট দেবলোকও এই দোষে সমানভাবে তুষ্ট! তবে, প্রাকৃতিক নিয়মে কামনা-বাসনা খুব সাধারণ চাহিদা। এতে নাক সিটকানোর ব্যাপার নেই। শুধু ওই যে, প্রথমে বলেছিলাম– শারীরিক বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এই তীব্র বাসনাগুলো আমরা স্থান, পাত্র বুঝে রুখে দিতে শিখেছি সভ্যতা দিয়ে। এটাই সভ্যতার সাফল্য! শিক্ষার জয়জয়কার!

The post মানুষের যৌনতার বোধ দিয়েই তৈরি হয়েছে অমর্তলোকের যৌনতা appeared first on Robbar | Sangbad Pratidin.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 112

Trending Articles