Quantcast
Channel: পাঁচমিশালি Archives - Robbar | Sangbad Pratidin
Viewing all articles
Browse latest Browse all 112

বাঙালির স্নানযাত্রায় সুখ আছে, সংকোচ নেই

$
0
0

গরমে গলতে গলতে পেরিয়ে আসা দিনগুলোর স্নানযাত্রার কথা ভাবছিলাম। ‘গরমের ছুটি’ মানেই দেশের বাড়িতে চলে যাওয়া– আটের দশকের শুরুর কয়েক বছর অবধি রুটিনটা এইরকমই ছিল। সেখানে নিত্য স্নানযাত্রা। দুপুর হলেই পাড়ার মেয়েরা শুকনো কাপড়, গামছা, তেল, সাবান নিয়ে বাড়ির পেছনে দীঘির দিকে যাত্রা করত স্নান করার জন্য। দিদিদের ছোটবেলা দেশের বাড়িতে কেটেছে তাই দিব্যি সাঁতার জানত– তাই ভিড়ে যেত ওদের সঙ্গে। আমাদের বাড়ির দীঘির ঘাট বাঁধানো ছিল না– ঢাল বেয়ে নামতে হত, আর জলের মধ্যে কয়েক কদম গেলেই একটা গর্ত ছিল। কিন্তু তাতে সাঁতারে পটু মানুষদের কিছু এসে যেত না, তরতর করে জলে নামত আর উঠত। ওদের সঙ্গে কয়েকবার দীঘিতে স্নান করতে গিয়ে অবধারিতভাবে সেই গর্তে পড়েছি আর তারপর সলিল সমাধির ভয়ে আর ওইদিক না মাড়িয়ে স্নানযাত্রার দিকপরিবর্তন করে নিতে হয়েছিল। শুকনো কাপড়, গামছা, তেল, সাবান সবই থাকত, শুধু দীঘির বদলে থাকত কুয়োতলা।

বাড়ি বাড়ি সেই কুয়ো নেই
কুয়োতলা

কলকাতার ভাড়া বাড়িতে মাপা জলে স্নান, ট্যাঙ্কের জল শেষ হয়ে যাওয়ার আর বাড়িওয়ালার বাড়তি পাম্প না চালানোর ভয় সেখানে নেই, কুয়োতে বালতি ফেলে জল তুলে হুড়হুড় করে মাথায় ঢালো যত খুশি, জল ফুরবে না। এই স্নানযাত্রার সময় পাঁচ বছরের ছোট চিন্টু তক্কে তক্কে থাকত, মাথায় এক বালতি জল ঢাললেই এসে জড়িয়ে ধরত– পরের বালতিগুলোর জল দু’জনের মাথায় একসঙ্গে পড়ত, এক লপ্তে দু’জনের স্নান হয়ে যেত। ‘ওরে কাঁচা জল আর গায়ে ঢালিস না, অসুখ হবে’ চিৎকার ঢাকা পড়ে যেতো দুই ভাইয়ের হি-হি হাসিতে। সন্ধেবেলায় নাক টানা, দুই একটা হাঁচি, টিমটিমে বাল্বের হলুদ আলোয় সবার চোখ এড়িয়ে নাক মুছে নেওয়া আর কানে আসা গজগজ ‘বলেছিলাম কাঁচা জল!’ ছিল নিত্য রুটিন, যেমন নিত্য রুটিন ছিল পরের দিনের কুয়োতলার দিকে স্নানযাত্রা।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

‘গরমের ছুটি’ মানেই দেশের বাড়িতে চলে যাওয়া– আটের দশকের শুরুর কয়েক বছর অবধি রুটিনটা এইরকমই ছিল। সেখানে নিত্য স্নানযাত্রা। দুপুর হলেই পাড়ার মেয়েরা শুকনো কাপড়, গামছা, তেল, সাবান নিয়ে বাড়ির পেছনে দীঘির দিকে যাত্রা করত স্নান করার জন্য। দিদিদের ছোটবেলা দেশের বাড়িতে কেটেছে তাই দিব্যি সাঁতার জানত– তাই ভিড়ে যেত ওদের সঙ্গে। আমাদের বাড়ির দীঘির ঘাট বাঁধানো ছিল না– ঢাল বেয়ে নামতে হত, আর জলের মধ্যে কয়েক কদম গেলেই একটা গর্ত ছিল। কিন্তু তাতে সাঁতারে পটু মানুষদের কিছু এসে যেত না, তরতর করে জলে নামত আর উঠত।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

উঁচু ক্লাসে পৌঁছে দেশের বাড়িতে গরমের ছুটি কাটানো বন্ধ হয়ে গেল টিউশনের জাঁতাকলে। কলকাতায় মাপা জীবন, মাপা জল মাঝেমাঝে আরও চাপে পড়ে যেত লোডশেডিংয়ের দৌলতে। পাম্প চলবে না, বাড়িতে জল নেই। মা আর দিদিরও ছুটি চলছে– তাদেরও তো স্নানের জল লাগবে! তাই এবার শহুরে স্নানযাত্রা– বাড়ির গলি থেকে বেরিয়ে দশ-বিশ পা বাঁদিকে হাঁটলে একটা টিউবওয়েল। দুটো বালতি হাতে নিয়ে সেখানে লম্বা লাইনে গিয়ে দাঁড়াতাম। এই স্নানযাত্রা শুধু নিজের জন্য নয়, বাড়ির সবার জন্য– বালতিতে জল ভরে অন্য বালতি লাইনে বসিয়ে জল ভরা বালতি নিয়ে বাড়ি দৌড়নো, সেখান থেকে ফেরত এসে আবার লাইনে দাঁড়ানো– এই করে বাড়িতে আট-দশ বালতি স্নানের জল পৌঁছে দিতে দিতে দুই-তিন ঘণ্টা কেটে যেত। ততক্ষণে সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গিয়েছে, জলের লাইন শেষ হয়ে গিয়েছে। অবশেষে খালি হাতে গামছা কাঁধে যাত্রা। টিউবওয়েলের তলায় বসে স্নান, কেউ একজন পাম্প করবে আর সেই জলে এতক্ষণ ধরে স্নানযাত্রার ধকল, পরিশ্রম আর স্নানের জল বয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘাম ধুয়ে যাবে।

Tube-well (No. 6) used at Bastuhara Colony 2.3.4 Drainage Condition... | Download Scientific Diagram

 

সেদিন পাঁজিতে স্নানযাত্রা ছিল। বিলু আর মনোজ কলেজে আসার পথে হাওড়ার কাছে গঙ্গার ঘাটে স্নানযাত্রার ভিড়ে ফেঁসে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে কলেজে পৌঁছেছে। বর্ষা এসে গিয়েছে কিন্তু দুই তিন ধরে বৃষ্টি হয়নি, বাইরে একেবারে চাঁদি-ফাটা গরম। বিলু ঘোষণা করল– আমরা স্নানযাত্রা করব। ডাফ হোস্টেল থেকে কয়েকটা গামছা চলে এল। দীপ টুক করে মানিকতলায় বাড়ি গিয়ে সুইমিং কস্টিউম চাপিয়ে চলে এল। দুপুরবেলার হেদুয়া পুরো ফাঁকা, কোনও পাহারাদারিও থাকত না সেই সময়ে। কলেজ থেকে বেরিয়ে একে একে আমরা হেদুয়ায় গিয়ে জড়ো হলাম– সেখানেই আমাদের স্নানযাত্রা।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

আরও পড়ুন সংহিতা সান্যাল-এর লেখা : বৃষ্টি পড়লে সমস্ত পৃথিবীটাই একটা ছাদ

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

শিল্পী: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলেজ থেকে বেরনোর আগে সুদিপ্তাদি’র সঙ্গে দেখা। আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় এই দিদি খুব স্নেহপ্রবণ ছিল, মাঝেমাঝেই আমাদের বেয়াড়া আবদার মিটিয়ে এটা-ওটা খাওয়াত। সুদিপ্তাদিকে বড় মুখ করে জানালাম আমাদের স্নানযাত্রার কথা, পাত্তা দিল না– আসলে বিশ্বাস করল না কলেজের কোনও ছেলে সত্যিই দুপুরে হেদুয়ায় নেমে পড়তে পারে! জলে নামতে গিয়ে বিলুর খেয়াল হল, অন্তর্বাস ভিজে গেলে তার ওপর প্যান্ট পড়লে ভীষণ বিসদৃশ হবে। অগত্যা কী আর করবে, শুধু গামছাটা কাছা দিয়ে পড়েই জলে নামল। দীপ ততক্ষণে সাঁতরে হেদুয়ার মাঝখানে পৌঁছে গিয়েছে। শুরু হল দীপ আর বিলুর কেরামতি আর রেস। মনোজ আর আমি সাঁতার জানি না, তাই গলা জলে দাঁড়িয়ে ওদের কেরামতি দেখছি আর মাঝেমাঝে ডুব মারছি জলে। সাঁতার কাটতে কাটতে হঠাৎ বিলু ‘সুদিপ্তাদি! সুদিপ্তাদি!’ বলে চেঁচিয়ে উঠল। দেখি সুদিপ্তাদি হেদুয়ার ভেতর দিয়ে শর্ট-কাট করে বোধহয় বেথুনের দিকে চলেছে। বিলুর চিৎকার শুনে জলের দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে গেল। কী হল বুঝতে না পেরে বিলুর দিকে তাকিয়ে দেখি, সে তখন চিৎ-সাঁতার কাটছে, গামছার কাছা কখন খুলে বুকের ওপরে উঠে গিয়েছে জানে না। সুদিপ্তাদি আর কোনও দিন আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। আমরাও আর কোনও দিন হেদুয়ায় স্নানযাত্রায় যাইনি।

……………………………………………….

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

……………………………………………….

কুয়ো, টিউবওয়েল আর হেদুয়ার কথা ভাবতে ভাবতে মনটা ঠান্ডা হল, কিন্তু ঘাম যেন বেড়ে গেল। স্নানযাত্রার সময় হয়ে এল– যাই, গিয়েএকটু শাওয়ারের তলায় দাড়াই। স্নানযাত্রায় আজকাল অনেক নামী বারোয়ারি দুর্গা পুজোর খুঁটি পুজো হয়– স্নান সেরে যাত্রা করব এক খুঁটিপুজোর নেমন্তন্ন রক্ষা করতে।

The post বাঙালির স্নানযাত্রায় সুখ আছে, সংকোচ নেই appeared first on Robbar | Sangbad Pratidin.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 112

Trending Articles