Quantcast
Channel: পাঁচমিশালি Archives - Robbar | Sangbad Pratidin
Viewing all articles
Browse latest Browse all 110

জীবনে বৃষ্টিই শুধু একপশলা নয়

$
0
0

বয়ঃসন্ধিকালে মনে হয়েছিল একমুঠো ধুলো আর একবুক ঢেউ নিয়ে কাটাতে হবে বাকি জীবন। কলেজে এসে জ্ঞানচক্ষু খোলে। সেকালে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই ওই নিকুঞ্জে পঠনের সুযোগ ছিল। সিধুজ্যাঠা টাইপ এক সিনিয়র বললেন, জানলার পর্দা সর্বদা একটু ফাঁক করে রাখবে, সুসময় কখন ঢুকে পড়বে কেউ বলতে পারে না। আরও বললেন, যদি এই চৌহদ্দির মধ্যে প্রেম খুঁজে না পাও তাহলে রাস্তায় বেরও। বাস-ট্রাম ইত্যাদির দিকেও কড়া নজর রাখ। এই দর্শন শিরোধার্য করে, একমাথা রোদ নিয়ে বাসস্টপে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি এক খাঁ খাঁ দুপুরে। একটা কাক পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না, এত গরম। কিন্তু কিম আশ্চর্যম! একটা লজঝড়ে বাস এসে খামোকা দাঁড়ায় ওই স্টপে। কেউ নামে না, কিন্তু তার একটা জানলায় আমার চোখ আটকে যায়।

অপূর্ব সুন্দর এক নারীর মুখ। আমি হাঁ করে তাকাই। তিনি আমায় দেখেছেন কি না বুঝতে পারি না। বাস চলতে শুরু করলে আমি বলিউডি ব্যর্থ প্রেমিক স্টাইলে হাত নেড়ে দিই। আর সেই নারী আমার অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে একগাল হাসেন। বাস চোখের আড়াল হলে খেয়াল হয়, সেটি আমার জন্যই ওই স্টপে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তার পিছু ধাওয়া করতে শিখিনি, কারণ শাহরুখ আর কাজল তখনও বছর আটেক দূরে। জানলার সেই মুখ আর একবারই ভেসে উঠেছিল দু’দশক পর, জীবিকার তাড়নায় ভোর ছ’টার ফ্লাইটে কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার সময়।

SRK DDLJ 25 Years| [VIDEO] Shah Rukh Khan Changes His Name, 60% OFF

উইন্ডো সিটে বসে ঢুলছি, স্পিকারে ক্যাপ্টেনের চাঁচাছোলা গলার আওয়াজে ঘুম ভাঙে– জানলা দিয়ে মাউন্ট এভারেস্ট আর তার সঙ্গীদের দেখা যাচ্ছে। আমি বেবাক তাকিয়ে থাকি। কোন চূড়াটি এভারেস্ট, তা বোঝার উপায় নেই। আসলে প্রয়োজনও নেই, কারণ প্লেনের জানলায় তখন ওই ১৭ বছর বয়সে দেখা বাসের জানলার মুখ। কিছুক্ষণেই প্লেন নেমে আসে ওই উচ্চতা থেকে। মেঘ ঘিরে ফেলে চারদিক, হালকা ঝাঁকুনি হয়। সিটবেল্টের সাংকেতিক আলো জ্বলে ওঠে।

তবে সিটবেল্ট পরেও রেহাই পাওয়া যায়নি একবার, আমেরিকা থেকে ফেরার পথে। মাঝ আকাশে ভয়ংকর টার্বুলেন্স। আমি ও আমার কয়েকজন সহকর্মী একে-অপরের মনের ভাব বোঝার চেষ্টা করছি আধো অন্ধকারে। সবারই মুখ শুকনো, হয়তো পরিবারের কথা ভাবছে। জয়েন্ট একাউন্ট, লাইফ ইন্সিওরেন্স ইত্যাদি। আমি অন্তত তাই ভাবছিলাম। এয়ারহোস্টেসরা দু’দিকের সিট ধরে কোনওরকমে দাঁড়িয়ে আমাদের অভয়বার্তা দিচ্ছেন। হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনি, এয়ারড্রপ। এক কমবয়সি এয়ারহোস্টেস ধপ করে আমার এক সহকর্মীর পাশের সিটে, যেটি খালি ছিল, বসে পড়লেন। মুহূর্তে অজ্ঞাত কারণে আমার প্রাণসংশয় উধাও। অসুবিধে বলতে সামান্য বুক জ্বালা ভাব, হিংসায় নাকি অম্বলে কে জানে! প্লেন ল্যান্ড করার পর আমরা সবাই গম্ভীর, শুধু একজন ছাড়া। সে সগর্বে ঘোষণা করে ওই কয়েকটি মুহূর্তে সে-ই নাকি সাহস জুগিয়েছে ওই এয়ারহোস্টেসকে।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

লিফটে অফিসের ৩০ তলা থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমেছি, দেখি ৫০-৬০ জন নারী-পুরুষ পটাপট ছবি তুলছেন। মায় সিকিউরিটি গার্ডরাও। কেউ ডিজিটাল ক্যামেরায়, কেউ বা মোবাইলে। আমি জ্যাকেটের কলার ঠিক করছি আর ভাবছি, আমার এত ফ্যান ফলোয়িং হল কোথা থেকে! চারপাশ একটু মেপে নেব বলে ঘাড় ঘুরিয়েই দেখি দীপিকা পাড়ুকোন!

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

সহকর্মীটি অফিসে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায়। যেরকম আমিও হতে পারতাম, মুম্বইয়ে, এক বিকেলে। লিফটে অফিসের ৩০ তলা থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমেছি, দেখি ৫০-৬০ জন নারী-পুরুষ পটাপট ছবি তুলছেন। মায় সিকিউরিটি গার্ডরাও। কেউ ডিজিটাল ক্যামেরায়, কেউ বা মোবাইলে। আমি জ্যাকেটের কলার ঠিক করছি আর ভাবছি, আমার এত ফ্যান ফলোয়িং হল কোথা থেকে! চারপাশ একটু মেপে নেব বলে ঘাড় ঘুরিয়েই দেখি দীপিকা পাড়ুকোন! অন্য একটি লিফট থেকে মর্তে নেমেছেন। তিনি হাত নাড়তে নাড়তে, একটি এক্সিট গেটের দিকে এগিয়ে গেলেন। ক্যামেরা-মোবাইলও ওদিকে দৌড়ল। আমি অন্য গেট দিয়ে রাস্তায় নামলাম। দেখলাম দীপিকাকে ছেঁকে ধরেছে ভক্তকুল। সেই মুহূর্তে আমার শুভাশিসের পোষা টিয়াপাখির কথা মনে পড়ল।

আট কিংবা ন’বছর বয়স তখন। শুভাশিস তার পোষা টিয়া দেখাতে এনেছে আমার বাড়ির উঠোনে। নতুন খাঁচা। পাখিটি কর্কশ কণ্ঠে অনবরত ডেকে চলেছে। শুভাশিসের মুখে অনাবিল আনন্দ। হঠাৎ কোথা থেকে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এল আমাদেরই আরেক বন্ধু, সঞ্জয়। সে চিৎকার করে এক ঝটকায় খাঁচার দরজা খুলে দিল আর টিয়া উড়ে গিয়ে বসল পাঁচিলের ওপর। এবার শুভাশিস কাঁদছে আর সঞ্জয় হাসছে হা হা করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোথা থেকে একঝাঁক কাক এসে হাজির। তখন আমরা সবাই, যে যেখানে ছিলাম, টিয়ার মঙ্গল কামনায়। মনে হল, সে হয়তো উড়তে শেখেনি ভালো করে। অথবা গালিফ স্ট্রিট থেকে হাতিবাগান, হাতে হাতে ঘুরতে ঘুরতে তার ওড়ার ইচ্ছে মরে গেছে! তবু, খানিক পরেই গভীর সংকটের আঁচ পেয়ে সে ডানায় জোর আনল। তারপর কয়েকটা ঝাপটায় নীল আকাশের গায়ে সবুজ ছোপ ফেলে উধাও। কাকেরা বাড়ির ছাদের অ্যান্টেনায় ফিরল। শুভাশিস তার শূন্য খাঁচা নিয়ে উঠোন পেরল।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

আরও পড়ুন অনুব্রত চক্রবর্তী-র লেখা: নতুন প্রেম আসে যখন, তখনও লোডশেডিংই পরিত্রাতা

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

পেট্রাপোল-বেনাপোলের তথাকথিত নো-ম্যান্স ল্যান্ডে যখন গেছি প্রথম যৌবনে, একটি বৃহৎ পিঞ্জরের মতোই লেগেছে তাকে। বিএসএফ আর বিডিআর-এর অনুমতি নিয়ে আমি আর আমার এক বন্ধু দাঁড়ালাম এক বনস্পতির নিচে, তাকে ছুঁয়ে। বন্ধুর আগের জেনারেশন ওপার থেকে কলকাতায় এসেছেন দেশভাগের পর, ছিন্নমূল। সুতরাং, তার আবেগের বহিঃপ্রকাশ স্বাভাবিক। আমার কাছে তখনও পর্যন্ত দেশভাগ মানে ঋত্বিক ঘটকের ছবি। মেলোড্রামা, যে জঁর আমার নিতান্ত অপছন্দের। অথচ ওই জমিতে দাঁড়িয়ে আচমকা নিজেকে ঋত্বিকের ছবির অংশ বলে মনে হল। সরকারি অফিসার ধমক দেন, ‘আর এক মিনিট’। অথচ আমরা, ওই গাছের মতই চলচ্ছক্তিহীন। ভাবছি, হাতের নাগালে একটা গোটা দেশ যে আমার থেকেও বয়সে ছোট। ‘আর এক মিনিট, স্যর, আর একটা মিনিট প্লিজ’। নাছোড়বান্দা পা টেনে যখন নিজের দেশে এলাম, মনে হল কী যেন ছেড়ে এসেছি। নাকি ছিঁড়ে এসেছি? কে জানে!

ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবির একটি দৃশ্য

এই অনুভূতি এক লহমার, কিন্তু মননে চিরস্থায়ী, যা ফিরে আসবে ভবিষ্যতে বাবার নাক থেকে অক্সিজেনের নল খুলে নেওয়ার মুহূর্তে। আমার আঙুলে তাঁর নাড়ির শেষ দৌড় শুরু হয়ে হঠাৎ থেমে যাওয়ার গুমোট স্তব্ধতায়। তাতে যেমন তীব্র এক বিষাদ চেপে ধরে পাঁজর, তেমনই আত্মানুসন্ধানের তির-তির উত্তেজনাও জেগে ওঠে শোণিতে। ভাগ্যিস, জানলার পর্দা সরানো ছিল সেই সকালে। তাই এক পশলা রোদ্দুর এসে ধুয়ে দিতে পেরেছিল খাট, আলমারি, বিছানা, বালিশ এবং আমার চোখে-মুখে ভিড় করা মৃত্যুর অনাবশ্যক অহংকার।

…………………………………….

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

…………………………………….

The post জীবনে বৃষ্টিই শুধু একপশলা নয় appeared first on Robbar | Sangbad Pratidin.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 110

Trending Articles