Quantcast
Channel: পাঁচমিশালি Archives - Robbar | Sangbad Pratidin
Viewing all articles
Browse latest Browse all 113

স্বপ্নের মতো একটা দেশ, ফিরে পাওয়া যায় হারিয়ে যাওয়া ওয়ালেটও

$
0
0

পড়ার টেবিলের পাশেই একটা বিরাট জানলা। জানলার বাইরে উঁচু উঁচু গাছের বিরাট জঙ্গল। জঙ্গলের মধ্যে হ্রদ। আকাশে তখন পেঁজা তুলোর মেঘ। সদ্য বসন্ত এসেছে তোমার দেশে, আমারও। বিকেল হলেই তুমি হাঁটতে যেতে ওই জঙ্গলের পথ বেয়ে। বড্ড লোভ হত। যদি একবার তোমার সফরসঙ্গী হওয়া যায়! মধ্যবিত্তের লোভ তো, তাই হয়তো নজর লেগে গিয়েছিল। সে জঙ্গলের পথ ধরে যাওয়া হয়নি কখনও। তুমি বলেছিলে জঙ্গলের নাম ‘নুকশিও ন্যাশানাল পার্ক’। সে জঙ্গল বিখ্যাত। ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি পর্যটক এখানে ভিড় করে প্রতি বছর।

সে এক আশ্চর্য জায়গা। শীতের সময় এখানে বরফের স্তূপ জমে যায়। উঁচু উঁচু পাইন, ম্যাপল গাছ নতজানু হয় উত্তুরে হাওয়ার কাছে, আবার বসন্ত এলেই এখানে পাখা মেলে পরির দল। যদিও সে সব কল্পবিজ্ঞান তবে ফিনল্যান্ড বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় এখনও উপরে। টানা সাতবার। হয়তো এ মাসেই আটের ঘরে ঢুকে যাবে সেই তালিকা। কী আশ্চর্য সেই দেশ! কী মনোরম আবহাওয়া। ওই দেশে মানুষ নীরবতা পছন্দ করে, প্রয়োজন ছাড়া কেউ একে অন্যের সঙ্গে নাকি কথা বলে না! শুধু তাই নয়, উল্লেখ করা ভালো যে, অর্থবহ কথা থাকলে তবেই একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে। তুমি তো তখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঝগড়া করতে! যদিও তোমার কাছে প্রতিটা ঝগড়াই প্রচণ্ড অর্থবহ ছিল; তবুও তুমি যে সেই দেশের সঙ্গে একেবারেই বেমানান ছিলে, তেমনটা নয়।

Study in Finland: A Guide for International Students

সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কফি খাওয়ার তালিকায় শীর্ষে ফিনল্যান্ড। তোমার প্রিয় কফি আর আমার চা! তাই প্রতিনিয়ত যুদ্ধ লেগেই থাকত। ফিনল্যান্ডকে ‘হ্রদের দেশ’-ও বলা হয়। উত্তর ইউরোপের এই দেশটি কোনও রূপকথার গল্পের চেয়ে কম নয়। এই দেশের জনসংখ্যা ৫৬ লাখের আশেপাশে। ছিমছাম এই দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশই ঘেরা জঙ্গল দিয়ে। এই দেশের রাজধানী হেলসেঙ্কি। হেলসেঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয় সারা বিশ্বের ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুব আকর্ষণীয়। সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর বহু ছাত্রছাত্রী এখানে উচ্চশিক্ষার জন্য আসে। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা সারা বিশ্বের মধ্যে সেরার সেরা। এখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো হয় শেখার জন্য, নম্বর বা গ্রেড পাওয়ার জন্য নয়। এই চিন্তাভাবনা থেকে ওই দেশের মা-বাবারা তাঁদের সন্তাদের স্কুলে ভর্তি করেন। স্কুলে যাওয়ার কোনও নির্দিষ্ট পোশাক নেই, শুধু তাই নয় শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ‘হোমওয়ার্ক’ দেওয়ার প্রচলন নেই। তারা স্কুলে তাঁদের শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকে! তাঁদের শিক্ষাব্যবস্থা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে যেখানে বাচ্চাদের মনে না হয় যে, তারা বড্ড চাপের মধ্যে আছে। তাদের উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন অভ্যাসটা একেবারেই ফিনল্যান্ডে হয় না। তাঁরা বারবার শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকার কথা বলেন। পড়া মনে রাখার চেয়ে কঠিন এবং জটিল সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যাবে, সেই শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়। ফিনল্যান্ডে শিক্ষার হার প্রায় ১০০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতে শিক্ষার হার ৭৭ শতাংশ।  ভারতের মতো বড় বড় পরীক্ষা ( স্কুল এবং কলেজ স্তরে) হওয়ার রীতি নেই ওই দেশে।

ফিনল্যান্ডে কাজের পরিবেশ এবং পরিস্থিতি সারা বিশ্বের মধ্যে সেরা। যার দরুন বারবার এই দেশ সুখী দেশের তালিকায়। বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ওই দেশের কর্মক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ সপ্তাহে ৩৬-৩৮ ঘণ্টা কাজ করে। এর বেশি নয়। অতিরিক্ত কাজ করা কিংবা অতিরিক্ত সময় কাজ করে অর্থ উপার্জন করা ওদেশের ধাতে নেই। উপরন্তু তাঁরা তাঁদের সারাদিনের অতিরিক্ত সময় নিজেদের পরিবার এবং প্রকৃতির সঙ্গে কাটাতে ভালোবাসে। অফিসের বসের চাপ কিংবা চাকরি হারিয়ে ফেলার ভয় এ দেশে একেবারেই নেই বললে চলে। অন্যদিকে এই দেশে অফিসের কাজের চাপে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। ভারতে অফিস পলিটিক্স অনেক ক্ষেত্রেই চাকরির উন্নতি বা টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে ফিনল্যান্ডে এইসব ঘটনা বিরল। ফিনল্যান্ডের অফিস সংস্কৃতি স্বচ্ছ, কর্মী-বান্ধব এবং কর্মীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। একটি বহুজাতিক সংস্থার সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভারতে প্রায় ২৩ শতাংশ মানুষ অতিরিক্ত কাজের জন্য হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয় সারা বিশ্বে সবচেয়ে বাজে অফিস পলিটিক্সে ভারত এক নম্বরে আর অন্যদিকে সবচেয়ে ভালো অফিসে কাজের পরিবেশে ফিনল্যান্ড এক নম্বরে।

GWEN RAVERAT 'poplars' Wood Engraving Printed From the Original Block. Trees. Landscape. River. Image Size 7x3.25ins - Etsy Finland
ফিনল্যান্ডের কাঠখোদাই। শিল্পী: গ্রেন রাভেরাট

একটি বহুজাতিক সংস্থার দাবি ফিনল্যান্ডের মতো সৎ মানুষ সারা পৃথিবীতে নেই। কোনও হারিয়ে যাওয়া জিনিস সহজেই ফিরে পাওয়া যায় এখানে। একটি পরীক্ষামূলক সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, সারা বিশ্বে ‘ড্রপ ওয়ালেট টেস্ট’-এর রিপোর্ট বলছে ফিনল্যান্ডে হারিয়ে যাওয়া ১০০টি মানিব্যাগের মধ্যে ৯৯টি পুনরায় ফিরে পাওয়া যায়। এদেশে মানুষ একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস, ভরসা খুবই গভীর। এঁরা সরকারের প্রতি খুব আস্থাশীল। সারা বিশ্বের স্বচ্ছতার তালিকাতেও ফিনল্যান্ড উপরে। অর্থাৎ এখানে দুর্নীতি হয় না। কেউ ঘুষ খায় না। ক্রাইম রেটও প্রায় শূন্য। অন্যদিকে এদেশে মানুষ তাঁদের নির্বাচিত সরকারের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্নীতির সূচকে ভারত ১০০-এর মধ্যে ৩৮ নম্বর পেয়েছে এবং ১৮০টি দেশের মধ্যে ৯৬তম স্থানে রয়েছে। তোমার মুখে গল্প শুনেছি ওই দেশের গ্রামে সবজির ছোট ছোট দোকান আছে। সে দোকানে সবজির গায়ে সাঁটা আছে দাম। দোকানে রাখা থাকে একটি বাক্স। যে বাক্সে টাকা থাকে। কিন্তু দোকানে লোক থাকে না। তবুও সে দেশে লোকে জিনিস কিনে সঠিক দাম দিয়ে বাক্সে টাকা রেখে আছে। মনে হচ্ছে না, একটা ম্যারম্যারে সিনেমার স্ক্রিপ্ট? কিন্তু এটাই বাস্তব। ফিনল্যান্ড এতটাই সভ্য এবং উন্নত।

………………

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্নীতির সূচকে ভারত ১০০-এর মধ্যে ৩৮ নম্বর পেয়েছে এবং ১৮০টি দেশের মধ্যে ৯৬তম স্থানে রয়েছে। তোমার মুখে গল্প শুনেছি ওই দেশের গ্রামে সবজির ছোট ছোট দোকান আছে। সে দোকানে সবজির গায়ে সাঁটা আছে দাম। দোকানে রাখা থাকে একটি বাক্স। যে বাক্সে টাকা থাকে। কিন্তু দোকানে লোক থাকে না। তবুও সে দেশে লোকে জিনিস কিনে সঠিক দাম দিয়ে বাক্সে টাকা রেখে আছে। মনে হচ্ছে না, একটা ম্যারম্যারে সিনেমার স্ক্রিপ্ট? কিন্তু এটাই বাস্তব। ফিনল্যান্ড এতটাই সভ্য এবং উন্নত।

………………

আমাদের নোকিয়া মোবাইল ফোনের কথা হয়তো সকলেরই খেয়াল আছে। এই দেশ জন্ম দিয়েছে নোকিয়া মোবাইলের। সারা বিশ্বের তাবড় তাবড় আইটি ইঞ্জিনিয়ার এই দেশে কাজ করতে আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। তোমার মুখে শুনেছি ওই দেশে একটানা সূর্য থাকে প্রায় দু’মাস। সেই ছোটবেলায় ভূগোল বইতে পড়েছিলাম। তারপরে তোমার কাছে শুনেছি সেই মায়াবী দিনগুলোর কথা। ইংরেজিতে বলে ‘মিডনাইট সান’। মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ওই দেশে উত্তর ভাগে একটানা দিন থাকে। এই আশ্চর্য ঘটনাটি ঘটে পৃথিবীর ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকার কারণে। গ্রীষ্মকালে, পৃথিবীর উত্তর মেরু সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে, ফলে ‘আর্কটিক সার্কেলের’ ওপরে থাকা অঞ্চলগুলো দিনের পর দিন সূর্যের আলোয় ভাসতে থাকে। এই সময় সেখানে সূর্য অস্ত যায় না, বরং পুরো রাত জুড়ে আকাশে কম বেশি আলোর উপস্থিতি থাকে। এর কারণ, সূর্যের আলো সেই অঞ্চলে এমন কোণে পড়ে যে, সেটি পুরোপুরি দিগন্তের নিচে নামে না। আবার এর উল্টো ঘটনাও ঘটে। যাকে ‘পোলার নাইট’ বলা হয়। নভেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত  প্রায় ৫০ দিন সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকে। পৃথিবীর ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকার কারণে, শীতকালে উত্তর মেরু সূর্যের বিপরীত দিকে ঝুঁকে থাকে। ফলে আর্কটিক সার্কেলের ওপরে থাকা অঞ্চলে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, আর দীর্ঘ সময় ধরে রাতের অন্ধকার বিরাজ করে। এই সময় তীব্র ঠান্ডা থাকে। অনেকসময় উষ্ণতা মাইনাস ত্রিশ ডিগ্রিতে নেমে যায়।

Best Things to Do in Finland: A Travel Guide by Star Vacations

তোমার চোখ দিয়ে আমি অরোরা বোরিয়ালিস দেখেছিলাম। সেই মায়াবী রাত। তখন আকাশে অসংখ্য নক্ষত্র,  সঙ্গে ভিন্ন রং ছড়িয়ে পড়ে সারা আকাশে। এক অপূর্ব বিস্ময়। চুপচাপ শুধু চেয়ে থাকা আকাশের দিকে। দৃষ্টি স্থির হয়ে আসে। মনে হয় পৃথিবীর সব সুখ এখানেই লুকিয়ে আছে। তুমি বলতে ওই দেশে তোমার একটাও বন্ধু নেই। আসলে ওরা বাইরের দেশের লোকদের সঙ্গে মিশতে নারাজ। নিজেদের নিয়ে থাকতে ভালবাসে। ওই দেশের কে কী করছে, কী খাচ্ছে, কী পরছে– এইসব নিয়ে কেউ ভাবে না। কথাও বলে না। ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে ওরা। সমাজ কী ভাববে, সেটা ওদের ব্যক্তিগত জীবনে একদম প্রভাব ফেলে না। আর এই কারণের জন্যই ফিনল্যান্ড সুখী দেশের তালিকায় এক! অন্যদিকে ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমেছে। ২০১৬ সালে যেখানে ভারত ছিল ১৩৩তম স্থানে, ২০২৩ সালে তা নেমে গেছে ১৬১তম জায়গায়। আর এই জন্যই ‘হ্যাপি ইনডেক্সে’ ভারতের স্থান ১২৬ নম্বরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভারতে প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ মানসিক ভাবে রোগাগ্রস্ত। কম বয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। সমীক্ষা বলছে, ভারতের মানুষ একে অন্যকে বিশ্বাস করে না। কারণ তাঁদের দেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নেই। অতীতের কোনও আঘাত তাঁরা সহজে ভুলতে পারেন না। সেই সঙ্গে বেকারত্ব বেড়ে গিয়েছে। কাজের তাড়নায় অনেকে দেশ ছাড়ছে। সারা দেশে বেকারত্বের হার প্রায় ৮ শতাংশ। ফিনল্যান্ডের গড় মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৪৯,০০০ ডলার, যেখানে ভারতের গড় মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ২,২০০ ডলার। এই অর্থনৈতিক বৈষম্য জীবনযাত্রার মানের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ফিনল্যান্ডের মানুষের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে ১২ বছর বেশি। প্রসঙ্গত তাঁরাও যোগা এবং প্রাণায়ামে অভ্যস্ত। তবে তুমিও শেষ পর্যন্ত ওই দেশে থাকতে পারনি। বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় এক নম্বরে থাকলেও দিনের শেষে নিজের কাছে সুখ আছে কি না, সেটাই আসল।

5 Reasons To Visit Finland, The World's Happiest Country

জানলার বাইরে দেখা যায় বহু দূর। একটা পলাশ গাছ থেকে প্রতিদিন ঝরে পড়া ফুল দেখতে দেখতে মনে পড়ে তোমার কথা। লেখার টেবিলে এখনও পড়ে আছে ফিনল্যান্ড থেকে আনা কাঠখোদাই। পড়ে আছে অরোরা বোরিয়ালিসের স্মৃতি। তুমি বারবার বলতে ফিরে যাবে ফিনল্যান্ডে! কারণ তুমি এখন নীরবতা পছন্দ করো। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলো না। ঝগড়াও এখন ফুরিয়ে গিয়েছে। তবুও চায়ের দোকানের আড্ডা ছাড়া বাঁচা কি যায়? মিছিলে মিছিলে পা না মেলালে কি বন্ধু বলা যায়? এই শহরটার মতো চঞ্চল হোক জীবন, এই দেশের মতো উজ্জ্বল হোক আগামী, এইটুকুই।

 

The post স্বপ্নের মতো একটা দেশ, ফিরে পাওয়া যায় হারিয়ে যাওয়া ওয়ালেটও appeared first on Robbar | Sangbad Pratidin.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 113

Trending Articles